উখিয়া নিউজ ডেস্ক::
মিয়ানমারের সহিংসতায় বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গাদের মধ্যে ১৯ জনের এইচআইভি শনাক্ত হয়েছে। ৮ অক্টোবর রোববার কক্সবাজারের সিভিল সার্জন মো. আবদুস সালাম প্রিয়.কমকে এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, ‘২৫ আগস্ট মিয়ানমারে সহিংসতার ঘটনায় পালিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়া ১৯ রোহিঙ্গার এইচআইভি পজেটিভ ভাইরাস পাওয়া গেছে। এদের মধ্যে ১৮ জন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। দুই সপ্তাহ আগে এইডসে আক্রান্ত আরেকজন কক্সবাজার সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা গেছেন।’
আবদুস সালাম বলেন, ‘এইচআইভি পজেটিভ হিসেবে শনাক্ত ১৯ জনের মধ্যে ১৭ জন মিয়ানামারে থাকাকালীন সময়ে এ রোগের নিয়মিত চিকিৎসা নিতেন। তারা বাংলাদেশে আসার পর অসুস্থ হয়ে পড়লে চিকিৎসা নিতে এসে শনাক্ত হন। অন্য দুইজন এখানে আসার পর চিকিৎসা নিতে এসে শনাক্ত হয়েছেন।’
এর আগে মিয়ানমার থেকে আসা এইডস আক্রান্ত দুই রোহিঙ্গা নারীকে চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ২৪ সেপ্টেম্বর রোববার রাতে কক্সবাজারের উখিয়ার শরণার্থী শিবির থেকে তাদের চট্টগ্রাম মেডিকেলে পাঠানো হয়।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই আলাউদ্দিন তালুকদার জানিয়েছিলেন, এইচআইভি আক্রান্ত দুই নারীর একজনের বয়স ৫০ বছর, আরেকজনের বয়স ৬০ বছর।
প্রসঙ্গত, মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গারা বিভিন্ন ধরনের রোগে ভুগছেন। এর মধ্যে ডায়রিয়া, শ্বাসতন্ত্রজনিত বিভিন্ন রোগে এখনও ২০০ রোহিঙ্গা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ২৬ আগস্ট থেকে ১৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কক্সবাজার সদর হাসপাতাল, উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলা হাসপাতালে তিন হাজার ১৪ জন রোহিঙ্গা ভর্তি হয়ে সেবা নিয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার অ্যান্ড কন্ট্রোল রুম।
এদিকে শরণার্থী ক্যাম্পে আশ্রয় নেওয়া প্রায় ১৫ হাজারেরও বেশি অন্তঃসত্ত্বা নারী রয়েছেন বলে জানা গেছে। তাদের একাংশ সন্তান জন্ম দিচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস।
স্বাস্থ্য অধিদফতর এবং কক্সবাজার সিভিল সার্জন অফিস সূত্রে জানা গেছে, দেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা অন্তঃসত্ত্বা নারীদের মধ্যে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন নারীর সন্তান ভূমিষ্ট হচ্ছে। সব ধরনের চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে সচেষ্ট রয়েছে স্থানীয় হাসপাতাল ও দায়িত্বপ্রাপ্তরা।
উল্লেখ্য, নতুন করে ১১ আগস্টে রাখাইন রাজ্যে সেনা মোতায়েনের পর ২৫ আগস্ট রোহিঙ্গা ‘জাতিগত নিধন’ শুরু হয়। ঘটনায় প্রাণ বাঁচাতে বাংলাদেশে পালিয়ে আসে লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী। পুরানো পাঁচ লাখ রোহিঙ্গার সাথে নতুন অভিযানে ইতোমধ্যে যোগ হয়েছে আরও চার লাখের বেশি রোহিঙ্গা।
সারা বিশ্বে ইউএনএইচসিআর কতৃক নিবন্ধিত ১৭ দশমিক ২ মিলিয়ন শরণার্থীর ৩০ ভাগ এখন বাংলাদেশে। এরই মধ্যে চলমান রোহিঙ্গা ঢল অব্যাহত থাকলে শরণার্থীর এ সংখ্যা ১০ লাখে পৌঁছাতে পারে বলেও সতর্ক করেছে জাতিসংঘ।
গত ১৩ সেপ্টেম্বর বুধবার মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গাদের ওপর সরকারি বাহিনীর চলমান নির্মম নির্যাতনের প্রেক্ষিতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের জরুরি বৈঠক আহ্বান করা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে এ বৈঠকের অনুরোধ জানিয়েছিল নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য যুক্তরাজ্য এবং অস্থায়ী সদস্য সুইডেন।
তবে ১২ সেপ্টেম্বর মঙ্গলবার মিয়ানমারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ইউ কিউ জেইয়া দেশটির সংবাদমাধ্যমকে জানান, এই বৈঠকে অংশ নেবেন না মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের নেত্রী অং সান সু চি।
আর বুধবার বৈঠক শেষে আরাকানে চলমান রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি আহ্বান জানান জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য দেশগুলো।
এ ছাড়া রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনার জন্য ফের বৈঠক ডাকতে অনুরোধ করেন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সসহ সাত দেশ।নিরাপত্তা পরিষদের তিন স্থায়ী সদস্য ছাড়া অন্য দেশগুলো হচ্ছে- মিসর, কাজাখস্তান, সেনেগাল ও সুইডেন।
পাঠকের মতামত